![]() |
সর্বোচ্চ শক্তির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া | ছবি: বিবিসি |
২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ফের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র
পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া, এর নাম হুয়াসং-১৫। সিএনএন’র একটি ভিডিও বার্তায় বলা
হয় ক্ষেপণাস্ত্রটি ৫৩ মিনিট শূন্যে ছিল এবং ৯৫০ কিলমিটার দূরে জাপান সগরে পতিত হয়।
এটি এ বছরের ২০তম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। পিয়ংইয়ং বলছে তাঁদের এ পরীক্ষা সফল হয়েছে
এবং ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বা
নিউইয়র্কের সমান দুরত্ব পর্যন্ত আঘাত
হানতে সক্ষম। প্রতিরক্ষামূলক শক্তি বৃদ্ধির
দোহাই দিয়ে ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া এমন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তাঁরা আসলে
কতটুকু শক্তি অর্জন করে চলমান কার্যক্রম স্থগিত বা বন্ধ করবেন? কিংবা আর কতটা
শক্তিশালী হতে পারলে অন্যসব দেশ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণ করতে উৎসাহী হবে না? এমন
প্রশ্ন করছেন অনেকেই।
ড. জন নিলসন-রাইট নামের এক গবেষক ঠিক অনেকটা এমনই
বলছেন যা বিবিসি প্রকাশ করেছে ‘যদি উত্তর কোরিয়া নিজেদের নিরাপদ মনে করে এবং
নেতারা যদি নিয়মিত দাবি করতে পারেন যে তাদের পারমাণবিক এবং ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র
শুধুই নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার খাতিরে, সেক্ষেত্রে কিম জং উন একটা শক্ত অবস্থানে
থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিষয়টি
নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। এমন আলোচনার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার নেতা মি. কিম তার দুটি
কৌশলগত লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণ করতে পারবেন। যেগুলো হলো জনগণের কাছে নিজের নেতৃত্বকে
আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলা; সঙ্গে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।’
ভবিষ্যতে আরও এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথাও
নিশ্চিত করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম কেসিএনএ। সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র
পরীক্ষার সঙ্গে দেয়া উত্তর কোরিয়ার সরকারী বার্তা সংস্থার বিবৃতি অনুযায়ী, সর্বশেষ
পরীক্ষাটি ছিল দীর্ঘ মেয়াদী প্রযুক্তিগত পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল। মি. কিমের ভাষ্যমতে
‘পারমাণবিক শক্তি অর্জনে রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন
যেদিন দেশটির পরমাণু শক্তি অর্জনের লক্ষ্য পূর্ণ হলো।’ এ থেকে এখন বিশ্ব মোটামুটি
নিশ্চিত যে উত্তর কোরিয়া তাঁদের লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছে। তবে এসব প্রযুক্তিগত দিক
থেকে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠা উত্তর কোরিয়ার এমন আরও পরীক্ষা চালানোর সম্ভাবনার
ইঙ্গিত দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলো আশঙ্কা করছে আন্তঃমহাদেশীয়
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পারমাণবিক বোমা তৈরির এবং আমেরিকার কোন
শহরকে লক্ষ্য করে নির্ভুলভাবে তা উৎক্ষেপণের সক্ষমতা অর্জনের খুব কাছাকাছি উত্তর
কোরিয়া পৌঁছে গেছে। তথ্যপ্রমাণ যা পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার এই
লক্ষ্য অর্জন করতে অন্তত আরও কয়েক মাস বা সম্ভবত আর এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত করার জন্য আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
করতে হবে উত্তর কোরিয়াকে। সমরাস্ত্র পরীক্ষার অন্যতম একটা প্রধান উদ্দেশ্য থাকে
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বাইরেও নিজের শক্তি প্রদর্শন এবং শত্রুর দিক থেকে চাপ
প্রতিহত করা। গবেষকদের ধারণা, উত্তর কোরীয় কর্মকর্তারা বাইরের উস্কানির মুখে
নিজেদের দুর্বল না দেখানোর ব্যাপারে প্রায়ই সচেষ্ট থেকেছেন বিশেষ করে পিয়ংইয়ংয়ের
ঐতিহাসিকভাবে বৈরি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সামনে।
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে ব্যক্তিগত বাকযুদ্ধ লেহেই রয়েছে যা কারও কারও
কাছে অপ্রত্যাশিত আবার কারও কাছে হাসির উপকরণ মাত্র।
ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হুমকি
দিয়েছেন আগেই, আর সে দেশের নেতাকে ‘রকেটম্যান’ বলেও তাচ্ছিল্য করেছিলেন।
আন্তর্জাতিকভাবে উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ আর উত্তর কোরিয়া
রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক বলে দেশটিকে তালিকভুক্ত করায় উত্তর কোরিয়ার
সঙ্গে আমেরিকার বৈরি সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে তা জানে না এমন কেউ নেই। উনও
ট্রাম্পকে ‘পাগল’ বলেছিলেন। আবার ট্রাম্প সম্প্রতি যখন এশিয়া সফর করেন তখন উত্তর
কোরিয়ার নেতা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘বুড়ো’ বলেন- আর মার্কিন প্রেসিডেন্টও উত্তর
কোরিয়ার নেতাকে বলেন ‘বেটে ও মোটা’ যে ইস্যুতে অট্টহাসিতে হাসে পুরো বিশ্ব।
উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে বায়ুমণ্ডলীয় পারমাণবিক
পরীক্ষার সম্ভাবনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে সাইবার
আক্রমণ, অথবা পশ্চিম উপদ্বীপ দিয়ে নৌ-ঘাঁটিতে আক্রমণের মতো সম্ভাবনাও রয়েছে। তা
ঘটলে প্রত্যুত্তরে সীমিত আকারে হলেও কঠিন পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও
দক্ষিণ কোরিয়া। আর সেই পদক্ষেপকে যদি ভুল বোঝে উত্তর কোরিয়া, তাহলে তারা আরও বড়
ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রুত অবস্থার
অবনতি হতে পারে এবং পারস্পরিক বিধ্বংসী অবস্থা তৈরি হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
তার নিজের কঠিন অবস্থানকে কূটনৈতিক বিচক্ষণতা মনে থাকতে পারেন, যার দ্বারা তিনি
মনে করছেন উত্তর কোরিয়া আর চীনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন তিনি। তবে তার এই
অদূরদর্শী কৌশলকে উত্তর কোরিয়ার কোন চোখে দেখবে সেটা তিনি বিবেচনায় নিচ্ছেন না এমন
ভাবছেন বিশ্লেষকরা। আপাতত আমেরিকার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কোন রকম আলোচনারও লক্ষ্মণ
দেখা যাচ্ছে না। চীন ও রাশিয়ার প্রস্তাবিত ‘ফ্রিজ ফর ফ্রিজ’ উদ্যোগেও কোন সাড়া
দেয়নি তারা। ‘ফ্রিজ ফর ফ্রিজ’ উদ্যোগটি ছিল এমন একটি প্রস্তাব যা উত্তর কোরিয়ার
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করলে তার বদলে দক্ষিণ কোরিয়া আর আমেরিকা তাদের যৌথ সেনা
মহড়া বন্ধ করবে। প্রায় আড়াই মাস পর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোকে কিমের সংযম বলে
মনে করছেন।
কী হচ্ছে? কী হতে চলেছে? বিশ্ব কি তা দেখার
অপেক্ষায় রয়েছে নাকি বিপদের আশঙ্কা করছে?
- মু. মিজানুর রহমান মিজান
ইমেইল: mail@mizanurrmizan.info
#mizanurrmizan
Follow @MizanurRMIZAN
#mizanurrmizan
(দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭)